লুইস ফিগো
পর্তুগালের সেরা প্লেয়ার বললে নিঃসন্দেহে একটা নামই আসবে- ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। একটা ইউরো জয়ের জন্য পর্তুগীজরা তাকে আজীবন সম্মানের সাথে স্মরন করবে। লুইস ফিগোর নামটা হয়ত আসবে দ্বিতীয়তে; বার্সেলোনা সমর্থকদের কাছ থেকে মীরজাফর, চিটার, লোভী টাইটেল পাওয়া এই ফিগো।
ফিগোর ক্যারিয়ার শুরু হয় স্পোর্টিং সিপির সাথে। আগে ফুটসাল খেলতেন বলে অনেক স্কীল শিখে নিয়েছিলেন। পর্তুগিজ লিজেন্ড রুই কস্তা আর পিন্টোর সাথে পর্তুগালের গোল্ডেন জেনারেশন তৈরি করছিলেন। ১৯৯৫ সালে লুইস ফিগো পার্মা এবং ইন্টারের সাথে একসাথে চুক্তি করায় ইতালিতে ২ বছরের জন্য ব্যান হন। ফলে জয়েন করে ক্লাব বার্সেলোনা। বার্সেলোনায় ফিগো-রিভালদো-ক্লাইভার্ট ট্রিও খুব কড়া পারফরম্যান্স দিচ্ছিল। সমস্যা বাধাল রাইভাল রিয়াল মাদ্রিদ।
রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছিল পেরেজ আর সাঞ্জ। যোজন বিয়োজনে সাঞ্জ এগিয়ে ছিলো যেহেতু সাঞ্জ ৩২ বছর পর রিয়ালকে চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতেয়েছিল। পেরেজ তাই প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য টোপ ফেললেন। ঘোষনা দিলেন যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে লুইস ফিগোকে মাদ্রিদে আনবেন। আর যদি ব্যর্থ হন, তাহলে ৮৩,০০০ হাজার দর্শককে বিনামুল্যে সিজনের সব ম্যাচ দেখাবেন।
সেই সুবাদে পেরেজ আলাদাভাবে ফিগোর সাথে চুক্তি করেন যে, পেরেজ যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলদ ফিগো মাদ্রিদে যোগ দিবেন। চুক্তির জন্য ফিগোকে দিলে ১.৭ মিলিয়ন ইউরো। যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যান, তবুও ফিগো সম্পুর্ন টাকা রেখে দিতে পারবেন। কিন্তু পেরেজ যদি জিতে এবং ফিগো মাদ্রিদে জয়েন না দেয় তাহলে তাকে গুনতে হবে ২২ মিলিয়ন ইউরো। আরেকদিকে ফিগো ভাবেন সহজ ইনকামের কথা। আর অন্যদিকে এই সুযোগ ব্যবহার করে বার্সেলোনায় তার বেতন বাড়িয়ে নেবেন।
পেরেজের সাথে এই চুক্তির কথা ফাস হয়ে যায় মিডিয়াতে, এবং স্বভাবতই এই চুক্তির কথা অস্বীকার করেন ফিগো। ইমেজ রক্ষার্থের জন্য চাইলেও, পেরেজের সাথে তার গোপন চুক্তির কথা স্বীকার করতে পারেননি। অন্যদিকে ফিগোদ এজেন্ট বার্সা প্রেসিডেন্ট এর সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করলে প্রেসিডেন্ট কেবল উন্নত কন্ট্রাক্টের নিশ্চয়তা দেন। তাই ফিগোর নজর ছিল পেরেজের নগদ অর্থের।
যখন রিয়ালের নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়, কয়েকশ ভোটের বিনিময়ে জয়ী ঘোষিত হন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ, এবং চুক্তি মতে, ফিগো বলতে গেলে বাধ্য থাকেন রিয়ালে যোগ দিতে, কারণ তখনকার সময়ে তার পক্ষে এত বিশাল পরিমাণ টাকা পেরেজকে দেওয়া সম্ভব ছিলো না। তিনি বার্সা প্রেসিডেন্ট গ্যাসপার্টকে অনুরোধ করলেও, গ্যাসপার্ট টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান, তার কারণ ছিলো প্রধানত ফিগো বার্সেলোনার প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত থাকলে কখনই পেরেজের সাথে সেই চুক্তি করতেন না।
এই ট্রান্সফারের পর থেকেই বার্সেলোনার সবচেয়ে ঘৃণিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন লুইস ফিগো, এবং তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছোয় যখন তিনি ক্লাসিকো তে ন্যু ক্যাম্পে খেলতে নামেন। সেই সময় ন্যু ক্যাম্পের পরিবেশের জন্য একটা শব্দই যথার্থ - বিষাক্ত! স্টেডিয়ামের ভিতরে ফ্যানদের মুখে একটাই কথা, "ফিগো, মরো!"; "বিশ্বাসঘাতক!"
২০০২ এর ক্লাসিকোতে অবস্থা ছিলো আরও খারাপ, স্টেডিয়ামে ঢুকার সময় বাসের রাস্তার দুই পাশে ২৫ মিটার করে দূরত্ব রাখে পুলিশ, তবুও ইট, পাথরের বর্ষণ চলছিলো ফিগোদের বাসের উপর! খেলাটি গোলশূন্য ড্র হয়, এর মাঝে দ্বিতীয়ার্ধের মাঝপথে ১৬ মিনিট খেলা বন্ধ রাখতে হয়, কারণ, ফিগোর কর্নার নিতে প্রচুর অসুবিধা হচ্ছিলো। আর এই কর্নার নেওয়ার সময়ই ঘটে ফিগো কাহিনীর সবচেয়ে কুখ্যাত অধ্যায়, বার্সেলোনার গ্যালারি থেকে একটি শুকরের মাথা ছুড়ে দেওয়া হয় ফিগোর দিকে- একটি রক্তাক্ত শুকরের মাথা।
ফিগো এরপর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ২টি লীগ, ২টি কোপা দেল রে, একটি চ্যাম্পিয়নস লীগ, একটি সুপার কাপ ও একটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জয় করেন। এছাড়াও রিয়ালে অবস্থানকালেই তিনি তার ক্যারিয়ারের প্রথম ও একমাত্র ব্যালন ডি অর ও ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন, ব্যালন ২০০০ ও ফিফা বর্ষসেরা ২০০১ সালে। শেষে তিনি ইন্টারমিলানে জয়েন করেন এবং ২০০৯ সালে নিজের বুটজোড়া তুলে রাখেন।
এখনো লুইস ফিগোকে ক্ষমা করে নি বার্সা সাপোর্টাররা। সুযোগ পেলে এখনো লোভি ট্যাগ বসিয়ে দেয় এই ফিগোর গায়ে।
©মোহাম্মদ পারভেজ
No comments